চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় ভেঙ্গে পড়লো বাগদা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিসেবা৷
হট নিউজ, বাগদা: ৫ই নভেম্বর, বাগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এক শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় ভেঙ্গে পড়লো বাগদা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিসেবা৷ অভিযুক্ত চিকিৎসক বাগদা হাসপাতালের বি.এম.ও.এইস ডাঃ রাজর্ষী সেনগুপ্তের কথায় চিকিৎসায় গাফিলতির বিষয়টি মোটেও সঠিক নয়৷ তিনি যেহেতু হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকেন না, হাসপাতালের ইমার্জিয়েন্সির পাশে ডাক্তারদের বিশ্রামাগারে থাকেন অর্থাৎ রোগীদের ওয়ার্ড থেকে মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে সুতরাং ডেকে না পাওয়ার বিষয়টিও যুক্তিহীন৷ ডাঃ রাজর্ষী সেনগুপ্ত বলেন, বাচ্চাটি যখন হাসপাতালে ভর্ত্তি হয় তখন তার শরীরের কোন স্থানে আঘাতের কোন চিহ্ন ছিল না, তবুও প্রাথমিক চিকিৎসায় সে সম্পুর্ন স্বাভাবিক হয়েছিল, দৌড়াদৌড়ী করছিল, বিস্কুট খাচ্ছিল, তখন বোঝার কোন উপায়ই ছিলনা যে তার মাথার ভিতরে কোন চোট আছে? সন্ধ্যার দিকে বাচ্চাটি হঠাৎই বমি করে তারপরই খিচুনী, ওই অবস্থায় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো যেত, কিন্তু ওই মূহুর্তে রোগীর যা অবস্থা ছিল তাতে রাস্তায় তার মৃত্যু হতো, একথা ভেবেই তিনি দ্বায়িত্ত্ব নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করেছিলেন কিন্তু কপাল খারাপ, তাই তিনি শিশুটিকে বাঁচাতে পারেননি৷ ডাঃ রাজর্ষী সেনগুপ্তের বক্তব্য, তিনি নির্দোষ, চিকিৎসায় কোন প্রকার গাফিলতি করেননি, তবুও তার বিরুদ্ধে মামলা হলো৷ বাগদা হাসপাতালের ডাঃ মৃদুল সাহার কথায় ডাক্তারদের নামে মামলা হলে, হাসপাতালের ডাক্তার বাবুরা কোন ভরসায় ঝুঁকি নিতে সাহস দেখাবে? বাগদা গ্রামপঞ্চায়েতের উপ-প্রধান অমুল্য হালদার বলেন, শিশুটি যখন দৌড়াদৌড়ী করছিল তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে ওই শিশুটির পাশের বেডে ভর্ত্তি তার এক আত্নীয় কে দেখতে এসেছিলেন৷ পুরো ঘটনাটি তার সামনেই ঘটেছে বলে তিনি জানান৷ একজন প্রত্যক্ষদর্ষী হিসাবে উপ-প্রধান অমুল্য বাবুর সাফসাফ বক্তব্য, শিশুটির মৃত্যুতে তিনি ডাক্তার বাবুর কোন কর্তব্যকর্মে গাফিলতি দেখেননি, ডাক্তার বাবু শিশুটিকে বাঁচাতে আপ্রান চেষ্টা করেছেন৷ ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্ষী বাগদা ব্লক তৃণমুল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ডাক্তার বাবুর নামে মামলা করা মানেই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পরিসেবা থেকে বঞ্চিত করা, এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে৷ বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য মদন উকিল বলেন, বাগদার নতুন বি.এম.ও.এইস বাগদার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে পূনঃরোজীবিত করার চেষ্টা করছিল তাতে কিছু স্বার্থন্বেসী মানুষের স্বার্থে আঘাত লাগায় সেই কাজে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করছে৷ হাসপাতালের ডাক্তার বাবুর বিরুদ্ধে মামলা হওয়াতেই কি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিসেবা ভেঙ্গে পড়েছে? জানতে চাওয়া হলে বাগদা পঞ্চায়েত সমিতি স্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য নিমাই বিশ্বাস অবশ্য এ কথা মানতে চাননি৷ তিনি বলেন, বাগদা হাসপাতালের চিকিৎসার পরিকাঠামো অনুযায়ী পরিসেবা আগের মতই চলছে৷ ডাক্তার বাবুর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে নিমাই বাবু জানান, আমাদের কাছে খবর আসে হাসপাতালে ডাক্তারের চিকিৎসার গাফিলতিতে বয়রা অঞ্চলের ৭-৮ বছর বয়সের পাড়ুই সম্প্রদায়ের শিশুটির মৃত্যু হয়েছে৷ তারপর আমরা বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে ডাক্তার বাবুর কথায় জানতে পারি ভ্যান রিকসার সাথে ধাক্কা লেগে যে শিশুটি সকাল ১১টায় হাসপাতালে ভর্ত্তি হয়ে রাত ৭টা পর্যন্ত সুস্থ থাকার পর ৮টার সময়ে মারা যায়৷ ডাক্তার বাবুকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছেন তিনি ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা করেছেন কিন্তু বাঁচাতে পারেননি৷ তারপরই এব্যাপারে বাগদার বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ডঃ উপেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সি.এ তন্ময় চক্রবর্তীর সাথে কথা বলে মামলা দায়ের করার সিদ্ধা্ন্ত নিই৷ বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য, বিডিও, সি.এম.এইস সহ কয়েক জনকেও জানিয়েছি৷ বাগদা হাসপাতালে নিমাই বাবুর সঙ্গে স্থানীয় তৃনমুল নেতা পরিতোষ সাহা, বয়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ও তৃনমুল নেতা অরবিন্দু বিশ্বাস, পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃনমুল নেত্রী সুদেবী মন্ডল, তৃনমুল নেতা মুকুন্দ পোদ্দার, মৃত শিশুটির আত্নীয় স্বজন সহ বয়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন৷ তৃনমুল নেতা মুকুন্দ পোদ্দার বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু দালাল আছে তারা ডাক্তারদের সাথে আড্ডা মারে, সুবিধা আদায় করে, তাদের ইন্ধনেই ডাক্তারা এসব করে৷ তিনি আরও জানা্ দল ক্ষমতায় আসার পরও শুধুমাত্র গোষ্টীদ্বন্দের কারনে অনেক ব্যাপারে তাঁরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না৷ তৃনমুল নেত্রী সুদেবী মন্ডল বলেন, প্রথমে আমরাতো হাসপাতালে ছিলাম না পেষেন্ট পার্টির কাছ থেকেই চিকিৎসায় গাফিলতির বিষয়টি জানতে পারি৷ মৃত শিশুটির অবিভাবকরাও জানিয়েছে, বাগদা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাজর্ষী সেন গুপ্তের গাফিলতির কারনে তাদের একমাত্র সন্তান সাহেবের মৃত্যু হয়েছে৷
বর্তমানে ওই শিশু মৃত্যু কে ঘিরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় ভেঙ্গে পড়লো বাগদা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিসেবা৷ চিকিৎসকেরা আর দ্বায়িত্ত্ব নিয়ে চিকিৎসা করছেন না৷ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে রোগী পাঠানোর হিড়িক পড়েছে ফলে অধিকাংশ সময়ই বাগদা হাসপাতালের বেডগুলি থাকছে ফাঁকা৷
