জীবন যুদ্ধে আজও অনিল অপরাজেয়৷
হট রিপোর্ট, বাগদা ঃ- অনিল বিশ্বাস, বাড়ী বাগদার শলুয়ার দাড়ী গ্র্রামে, ওঁনার নামে নয় একজন জনপ্রিয় দেহতত্ত্ব ও বাউল শিল্পী হিসাবে সর্ব্বজন পরিচিত৷ দেহতত্ত্ব ও বাউল গান গেয়ে ভিক্ষাবিত্তী করে সংসার চালান তিনি৷ ওঁনার ৮৫ বছরের সু-দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের অনেকটা সময় শুধু মাত্র ভিক্ষাবিত্তী করেই কেটেছে৷ আর ভিক্ষাবিত্তী করেই তাঁর তিন মেয়েকে পাত্রস্থ করেছেন, মুক্ত হয়েছেন কণ্যাদায় থেকে৷ স্ত্রী সজোমনি(৭০)বয়সের ভারে শয্যা নিয়েছেন বছর তিনেক আগে থেকেই৷ অসুস্থ স্ত্রীর দেখভাল করতে হয় অনিল গোশায়েরই, তাই ইচ্ছে থাকলেও বেশী দুরে কোথাও যাওয়া আর হয়ে ওঠেনা৷ অনিল গোশাই এর বিচরণ ক্ষেত্র সীমান্তবর্তী বয়রা থেকে গয়া, কাশী, বৃন্দাবন, মথুরা, হৃষিকেশ, হরিদ্দ্বার অবধি৷ ওই সব তীর্থস্থানে গেলে বিভিন্ন প্রকার উপঢৌকন পাওনা সহ নগতে যা আয়পত্র হয় তাতে দু’জনের সংসার চলে যায় কমসেকম মাস ছয়েক মত, তারপর উপঢৌকন হিসাবে পাওনা পোশাক পরিচ্ছদ, চাদর, কম্বল যেগুলো পাওনা হয় তাতে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনীদেরও কিছুকিছু দেওয়া সম্ভবপর হয়৷ কিন্তু বিধি-বাম এত দিনের সাথী মৃত্যু পথযাত্রী অসুস্থ স্ত্রীর শেষ ইচ্ছে শেষের এই কটা দিন যেন তাকে ছেড়ে দুরে কোথাও না যায়৷ মৃত্যুর সময়ে চিরসাথী স্বামী দেবতার কন্ঠে ভক্তিগীতি আর মহা-নাম শ্রোবন করতে করতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সু-দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের ইতি টানতে৷ অসুস্থ চিরসাথীর শেষ ইচ্ছে রাখতে এ বছরেও আর অনিল গোশায়ের যাওয়া হলোনা মন পড়ে থাকা মধুর বৃন্দাবন, গয়া, কাশী, মথুরা, হৃষিকেশ ও হরিদ্দ্বারে৷ তিন মাস বার্ধক্য ভাতা পায়নি গোশাই-দম্পতি৷ পেটের খোরাকের সাথে রোগ রুগীর ওষুধ পথ্য যোগাতে রীতিমত দিশেহারা দোতারা বাদক এই জনপ্রিয় দেহতত্ত্ব ও বাউল শিল্পী অনিল গোশাই৷ ৮৫ বছর বয়সে এসে যেমন অনিল গোশায়ের শারিরিক সক্ষমতা কমেছে তেমনি মনের জোরটাকে বাড়িয়েছে দ্বিগুন, কারন জীবন চলার বাকিপথে একা, সঙ্গী বিহীন চলতে হবে তো৷ তাইতো আজ অনিল গোশায়ের দোতারা আজ করুন সুরে বেজে চলেছে “সাথী তোরে বিদায় দিতে মনো নাহি চাই, মরো বুক ভেঙ্গে যায়৷ তবুও যে তোরে বিদায় দিতে হয়, এ যাতনা তব মিটিবে গো কিসে? জানিতে যে বড় সাধ হয় ওগো এ-জন-মেরো সাথী৷” স্ত্রী বিয়োগের প্রাক্যালে স্ব-রোচিত এই বেদনা বিধূর গানটা গেতে গেতে মনের অগোচরে কখন-যে দু’চোখের কোনা থেকে অশ্রুধারা বইতে লাগলো বুঝতেও পারিনি আশু স্ত্রী বিয়োগ ব্যাথায় মুশরে পড়া দেহতত্ত্ব ও বাউল সঙ্গীত শিল্পী অনিল গোশাই৷
