বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না কখনো কখনো দূরেও ঠেলে দেয়৷

03/12/2015 13:44

হট নিউজ, বাগদাঃ- বড় প্রেম শুধু কাছে টানেনা কখনো কখনো দূরেও ঠেলে দেয়৷ জীবনের সকল প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে শুধু মাত্র তাঁদের পরিপূর্ন প্রেমকে সন্মান জানাতে সবকিছু ফেলে শুধু ভালবাসার মানুষ বাসন্তী তরফদার(দাস)এর হাত ধরে শুধু রিকসাটাকে সম্বল করে ঘর ছেড়েছিল শচীন দাস সেই ১৫টা বৎসর আগে৷ এই দীর্ঘ সময় পথ চলতে কখনো ক্লান্ত হয়নি শচীন৷ বাসন্তী শচীনের ভালবাসার ফসল হিসাবে ঝুমা(১৪)এর জন্মও হয়েছে ওই রিকসাতেই৷ প্রিয় কুকুর আর কন্যা ঝুমাকে নিয়ে দাস দম্পতির ছোট্ট সুখের সংসার আজো সেই রিকসাতেই৷ ‘যেখানে রাত ওরা সেখানেই কাত’৷ নিজের ঘর নেই, গাদা গাদা টাকা নেই, শখ শৌখিনতার জন্য গহনা, ভাল পোশাক মোবাইল টিভি কিছুই নেই ওদের কিন্তু খাওয়া দাওয়া আর সুখ শান্তির কোনই অভাব নেই দাস দম্পতির ছোট্ট চলমান সংসারে৷ সকালে খাওয়া দাওয়া সেরে দুই মায়ে-ঝিয়ে কয়েকটা বস্তা নিয়ে বেরিয়ে যায় পুরনো কাগজ, প্লাষ্টিক, কাঁচ, লোহা ইত্যাদির কুড়ানোর কাজে আর শচীন রিকসায় করে ওদের এগিয়ে দিয়ে কুকুরটাকে নিয়ে রিকসায় বসে অপেক্ষার প্রহর গোনে ভাঙ্গড়ী ভরা বস্তা নিয়ে স্ত্রী-কন্যার ফিরে আসা পথের দিকে চেয়ে৷ ওরা ফিরতেই বস্তা সহ সবাইকে রিকসায় চাপিয়ে চলে আসে মহাজনের ঘরে৷ সারাদিনের সংগ্রহ করা ভাঙড়ি বেচাকেনা করে বাজার সদাই সেরে বান্না-বান্না, খাওয়া দাওয়া শেষে পোষা কুকুরের নি্ছিদ্রো ও নিরলস পাহারায় রাতে নিশ্চিন্তে কর্মক্লান্ত দেহ এলিয়ে দেয় নিদ্রা দেবীর শীতল কোলে৷ একাক দিন একাক এলাকা ওদের কর্মক্ষেত্র, একাক এলাকায় রাত কাটানো সেসব বিচিত্র অভিজ্ঞতা৷ কুকুরের জন্য রাতে কেউ তাদের আশপাশে ভিড়তে পারে না৷ বিষ প্রয়োগে কুকুরটাকে মারার চেষ্টা করে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বার বার ব্যার্থ হয়েছে অনেকে, জানালেন শচীন৷ তার সাথ আলাপ কালে জানা গেল, বনগাঁর বাবু পাড়ায় তার পৈত্রিক বাড়ী৷ পরিবারের অমতে বাসন্তীকে বিয়ে করায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অবহেলার বিষাক্ত বানে জর্জরিত হয়ে ভিটে ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল ১৫ বছর আগে৷ ১৪ বছরের ঝুমার হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা কলম অথচ সে আজ হাতে তূলে নিয়েছে কর্মের হাতিয়ার৷ কিন্তু কেন? মেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট, রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার আইকার্ড, কোন কিছুর প্রয়োজনীয়তা আজো অনুভব করেনি এই চলমান দাস পরিবার, কেন? পরিবারের হৃদয় উজাড় করা ভালবাসাসিক্ত শচীন দাসের এই কেনর উত্তর, “এ সব কাগজ-পত্র, বিদ্যা, তাদের জন্য কোন সুখ এনে দেবে? একদিন ঝুমা বিয়ে করে চলে যাবে তার স্বামীর সংসারে, বাসন্তীও যদি চলে যায় নিয়তির আহ্বানে সাড়া দিতে, সেদিন হয়তো ব্যাথায় মুষরে যাব, অবাঞ্ছিত জালায় জ্বলে জ্বলে একদিন উঠব অস্থির হয়ে, চোখে নেমে আসবে আধাঁর, তবুও বাসন্তীর স্মৃতি গুলোকে রোমন্থন করে কাটিয়ে দেব বাকী জীবন তবুও পারবোনা ওই সব দিনের কথাগুলো ভুলতে, পারবোনা ওদের সাথে কাটানো এই মধুময় সময়টাকে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দিতে৷”

    একবিংশ শতাব্দীর সুবর্ণ লগ্ন এসে ভারত বর্ষের মানুষ যখন মাথা উঁচু করে উন্নত বিশ্বের সাথে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ সেখানে এই দাস পরিবার আমাদের জন্য কোন বার্তা নিয়ে এসেছে? এই প্রশ্ন আজ এলাকার সচেতন জনগনের৷