বাগদা হাসপাতালে আদিবাসী মহিলার মৃত্যুকে ঘিরে তান্ডব

07/08/2014 23:16

হট রিপোর্ট বাগদা ঃ

                 বাগদা গ্রামীন হাসপাতালে বন্ধ্যাকরণ করাতে এসে আর বাড়ী ফেরা হলো না চাকদার রাজার মাঠের এক আদিবাসী মহিলার৷ নীলিমা সর্দ্দার(৩০)নামের ওই আদিবাসী মহিলার তার তিন সন্তান কে মাতৃহারা করে পাড়ি জমালো পরপারের উদ্দেশ্যে৷ জানা গেছে ওই মহিলার স্বামী পিন্টু সর্দ্দার অন্য রাজ্যে সেন্টারিং এর কাজ করেন, সে তার দিদি সরলা মুন্ডার বাড়ী জগদিশপুর বেড়াতে এসে অভাব অনটনের সংসারের কথা ভেবে দিদি জামাই বাবুর পরামর্শেই বন্ধ্যাকরণ করানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ গত ৭ই আগষ্ট বাগদা গ্রামীন হাসপাতালের বি.এম.ও.এইচ ডাঃ সুরজ সিনহা বন্ধ্যাকরণের জন্য অস্ত্রোপচার করা কালিন ওই মহিলা অপরেশন থিয়েটারেই নিস্তেজ হয়ে পড়লে দ্রুত বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পথেই মারা যায়৷ ওই দিনই মৃতার জামাইবাবু বিকাশ মুণ্ডা জানান, বৃহঃপতিবার তার স্ত্রী শালিকাকে নিয়ে বাগদা গ্রামীন হাসপাতালে এসেছিল লাইগেশন করাতে৷ বি.এম.ও.এইচ ডাঃ সুরজ সিনহার চিকিত্সায় গাফিলতির কারনে দুপুরে তার শালিকা নিস্তেজ হয়ে পড়ে ওই সময় তার স্ত্রীকে ডেকে মৃতশালিকার দেহে স্যালাইন, অক্সিজেন লাগিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে করে বনগাঁ পাঠান এবং নিজেও অন্য গাড়ীতে করে বনগাঁ হাসপাতালে পৌছান৷ কিন্তু রোগী বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পৌছালে সেখানকার ডাক্তারা রোগীকে মৃত ঘোষনা করে৷ একজন মৃত ব্যক্তি নিয়ে এ ধরণের নাটকের বিষয়টি বাগদা থানাকে লিখিত ভাবে জানান৷ বাগদা থানা বি.এম.ও.এইচের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে৷ বি.এম.ও.এইচ ডাঃ সুরজ সিনহা অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷

                 অপর দিকে চিকি্ত্সায় গাফিলতিতে আদিবাসী মহিলা নীলিমা সর্দ্দারের মৃত্যুর খবর প্রচার হতেই জগদীশপুর গ্রামের এক ঝাঁক আদিবাসী মহিলা লাঠি হাতে বাগদা হাসপাতাল চত্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ওই সময়ে যুব তৃণমুল কংগ্রেসের সঞ্জিত সর্দ্দার, বিষ্ণু বিশ্বাস, মাধুরী সরকার, তুলসী বিশ্বাস, মুকুল হালদার, উপঃপ্রধান অমুল্য হালদার সহ বেশ কিছু তৃণমুল নেতৃত্ত্বও বিক্ষোভে সামিল হয়৷ বিক্ষোভ কারীরা একাধিক দোষের নায়ক ও খুনী সম্মোধন করে বি.এম.ও.এইচ ডাঃ সুরজ সিনহাকে গ্রেফতার পূর্ব্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীতে পথ অবরোধ করে৷ তাদের পথ অবরোধে প্রায় ৪৫ মিঃ বাগদা বয়রা সড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ খবর পেয়ে বাগদা থানার ওসি ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি সমাধানের উপযুক্ত আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ উঠে যায় কিন্তু বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছেড়ে হাসপাতাল থেকে দুই শত মিটার দুরে অবস্থিত বি.এম.ও.এইচের এক ধর্ম্ম আত্মীয় সুমন সাহার বাড়ীতে ঢুকে তার এ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুর করে এবং তার প্রসূতি স্ত্রী সুদীপা সাহাকে আহত করে৷ বর্তমানে সে বাগদা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন৷ স্থানীয় কয়েক জন ব্যাক্তি এই তান্ডব ও ভাঙচুরের নেতৃত্ত্ব দেন বলে বাগদা থানায় সুমন সাহা লিখিত অভিযোগ করেন৷ সুমন সাহার মা সীমা সাহা জানান, তাঁর ছেলে বর্তমানে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে, দিন রাত যখন তখন এ্যাম্বুলেন্সে রুগী নিয়ে বনগাঁ কলকাতা ছুটতে হয় এই সময় তার উপর আক্রমন হবার তীব্র আশংকা ব্যাক্ত করেছেন এ্যাম্বুলেন্স মালিক কাম ড্রাইভার সুমন সাহার মা বাবা৷

                 নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, বাগদা গ্রামীন হাসপাতালের বি.এম.ও.এইচ ডাঃ সুরজ সিনহাকে উর্ধ্বতন কত্তৃপক্ষ বাগদা গ্রামীন হাসপাতাল থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ডাঃ সিনহার বাগদা গ্রামীন হাসপাতাল থেকে সরানোর খবর পেয়ে তৃণমুল কংগ্রেসের ব্লক সম্পাদক মৃত্যুন বাবু ক্ষোভের সাথে জানান, মৃতা নিলীমা সর্দ্দারের তিন সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য কিছু না করলে ডাঃ সিনহা যেখানেই যাননা কেন ওই আদিবাসী বাচ্চা গুলোকে নিয়ে সেখানেই হাজির হবেন বলে হুসিয়ারী দেন৷ তৃণমুল কংগ্রেস পরিচালিত বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য নিমাই বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনের স্মরনাপন্ন হয়েছে দুই ব্যাক্তি সুতরাং আইনে যা হয় সেটাই সবার মেনে নিতে হবে৷